লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটক
পারভেজ আহমদ: লাউয়াছড়া থেকে ফিরে: চা বাগানের নারী শ্রমিকদের কচি পাতা উত্তোলনের দৃশ্য আর দিগন্ত রেখায় মিলিয়ে যাওয়া বিস্তৃত চা বাগানের সৌন্দর্য যেন মায়াময এক স্বপ্নের জগত। মিনি চিরিয়াখানার নানা প্রজাতির বিরল পশু আর মাথার ওপর দিযে ওড়ে যাওয়া অচেনা পাখির ঝাঁক দেখে হয়তোবা বিস্মযে ছানাবড়া আপনার চোখ। আর সে মুহুর্তেই পাশের ছাতিয়ান গাছটি থেকে বানরের পাল যদি আপনাকে ভেংচি কাটে তখন কেমন লাগবে আপনার ? এমনই জীব বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রানীর মহা মিলনের নান্দনিক স্থান লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
ব্যস্ত নাগরিক জীবনে হাপিয়ে ওঠা প্রতিটি মানুষেরই একঘেয়েমি ভ্রমণ আসতে চায এরকম জায়গায় । শ্রীমঙ্গল একটি অন্যতম স্থান।দেশে ট্রপিক্যল রেইন ফরেষ্ট হিসেবে খ্যাত এ পার্কটি বিনোদনের আকর্ষনীয় স্পটে পরিনত হয়েছে। উচুঁ-নিচু পাহাড় ও ঝরনা ধারায় পরিপূর্ণ দেশের প্রসিদ্ধ এ পিকনিক স্পটটি বছরের ৩৬৫ দিনের প্রতিদিনই অগনিত পর্যটকদের পদভারে হয়ে উঠে মুখরিত।
দেশ ও বিদেশের অজস্র ভ্রমণ পিপাসুরা প্রতিনিয়তই ছুটে আসছেন আনন্দ ভ্রমন কিংবা শিক্ষা সফরে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। মৌলভীবাজার ফরেষ্ট রেঞ্জের আওতাধীন শ্রীমঙ্গলের এই ন্যশনাল পার্ক শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য শুধু তাই নয়,দেশের সবকটি বনাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে নান্দনিক ও আকর্ষনীয়।
১৯২৫ সালে ১২৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে প্লান্টেশন করে তৈরী বনরাজী এখন ঘন প্রাকৃতিক বনের আকার ধারন করেছে।শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ন্যশনাল পার্কে প্রাইভেট কার ও জীপ নিয়ে পরিদর্শন করা যায়।পর্যটকদের জন্য শ্রীমঙ্গল শহরে রয়েছে নামী দামী বোর্ডিং রেষ্ট হাউস। সব মিলিয়ে পর্যটক গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এই পার্কটি এক অনন্য সুযোগ।জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর এই পার্কে দেখা মেলে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পশু-পাখি।বিভিন্ন দেশের পাখি প্রেমিরা লাউয়াছড়ায় ছুটে আসেন দেখতে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ধীরে ধীরে দেশের শিক্ষা,গবেষনা,ইকু-ট্যুরিজম সহ ভ্রমন বিলাশীদের চিত্র বিনোদনের অন্যতম আকর্ষনীয় স্পট হয়ে উঠেছে। গভীর অরন্য সমৃদ্ধ,অদ্ভুদ এক নির্জন পরিবেশে অবস্থিত লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষাদি।এর মধ্যে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, ম্যানজিয়াম, ডুমুর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।এ বনেই ছিল এশিয়ার বিখ্যাত বিরল প্রজাতির কোরোফর্ম বৃক্ষ। কয়েক বছর আগে ঝড়ে এ গাছটির মৃত্যু ঘটে। তবে বিরল কোরোফর্মের আরও একটি গাছের সন্ধান পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যা পর্যটকদের অত্যন্ত আকর্ষন করে।
এছাড়া ও রয়েছে ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরিসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের মধ্যে বিরল প্রজাতির উল্লুক, বানর, লজ্জাবতি বানর, হনুমান, ধনেশ, শ্যামা, অজগর, মেছোবাঘ, হরিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এ বনের বিচিত্র পশুপাখি ও পোকা মাকড়ের অদ্ভুদ এক ঝিঝি শব্দ, বানরের ভেংচী আর উল্লুখেরগাছে গাছে ছুটছুটি পর্যটকদের মনে অনাবিল আনন্দে ও শিহরন জাগিয়ে তুলে। এ বনে রয়েছে ৩টি প্রাকৃতিক ফুট ট্রেইল বা পায়ে হাটা পথ।
এরমধ্যে একটি ৩ ঘন্টার, একটি ১ ঘন্টার ও একটি ৩০ মিনিটের পথ রয়েছে। পর্যটকরা ইকো-ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করে পার্কটি ঘুরে দেখতে পারেন। এ পার্কে পর্যটকদের জন্য একটি ইনফরমেশন সেন্টার রয়েছে। এখান থেকে পাওয়া যায় পর্যটনের যাবতীয় তথ্যাদি।
এছাড়াও পার্কে রয়েছে ইকো-কটেজ,ইন্সপেকশন বাংলো,গোলঘর ফেন্সী ব্রীজ টয়লেট প্রভৃতি। পর্যটকদের সুবিধার জন্য পার্কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে বিলবোর্ড ও নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড। আকর্ষনীয় স্থান শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
বিশ্বের অগনিত প্রিয় গবেষক,পর্যটকদের সুপরিচিত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে উচু-নীচু পাহাড়ী টিলায় প্রচুর পরিমান চা,আনারস ও কাগজিলেবুর বাগান। এছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন আদিবাসী খাসিয়াদের পান পুঞ্জি,উঁচু-নিচু পাহাড় আর খাসিয়া, মণিপুরী ও পাহাড়ী লালনদের নানা সংস্কৃতি দেখতে ও জানতে হলে ভ্রমন করতে পারেন শ্রীমঙ্গল ।